ঢাকা প্রতিনিধি | মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও ’২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খায় বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি’ গড়ে তুলতে আগামী ২৯ নভেম্বর ’২৫ ‘জাতীয় কনভেনশন’ এর ঘোষণা।

শনিবার(১৫ নভেম্বর) বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদ এর উদ্যোগে যৌথ সংবাদ সম্মেলন দুপুর ১২টায় সিপিবি অফিসের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাজমুল হক প্রধান, সাজ্জাদ জহির চন্দন, আব্দুল্লাহ কাফি রতন, ইকবাল কবীর জাহিদ, মোশরেফা মিশু, মাসুদ রানা, আব্দুল আলী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডা. মুশতাক হোসেন, রাগিব আহসান মুন্না, রাজেকুজ্জামান রতন, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, রাশেদ শাহরিয়ার, শহীদুল ইসলাম সবুজ, নজরুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতার পর অল্প সময়ের মধ্যেই দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথ থেকে সরে যায়। বিভিন্ন সময় একদলীয় শাসন, সামরিক শাসন, কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে শুরু করে লুটপাট-নৈরাজ্য-দুর্নীতির কারণে দেশ গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা উল্লেখ করেন, ১৯৯০ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইতিহাসে দু'টি স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও জনগণের সেই বিজয় প্রতিবারই বড় অংশে ‘হাতছাড়া’ হয়ে গেছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের দেড় বছর পর দেশ আবারও নৈরাজ্য, অধিকারহীনতা ও গণতন্ত্রহীনতার চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার ভিত্তিতে মৌলিক সংস্কার ছাড়া এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।”
তারা জানান, দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় মানুষ উপলব্ধি করছে যে সুখ-স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে প্রগতিমুখী বিকল্প গণতান্ত্রিক শক্তির সরকার প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। সেই লক্ষ্যেই বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ জাসদসহ প্রগতিশীল, বাম, গণতান্ত্রিক দল, সংগঠন, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে চলতি ধারার রাজনীতির বিপরীতে ’৭১ এর চেতনা ও ’২৪ এর আকাঙ্খাল বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ৮ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
আট দফা প্রস্তাবনায় বলা হয়,
১. মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা।
২. ২০২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ হতে না দেওয়া; ফ্যাসিবাদী শাসনামলে খুন, গুম, লুটপাট ও সম্পদ পাচারের বিচার এবং উগ্র সাম্প্রদায়িকতার উত্থান রোধ।
৩. সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা।
৪. সন্ত্রাস-দুর্নীতি-লুটপাটমুক্ত জনবান্ধব শাসন প্রতিষ্ঠা।
৫. কর্মসংস্থানভিত্তিক উন্নয়ন, একীভূত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৬. সকল বৈষম্য দূর করে সমতাভিত্তিক সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়া।
৭. বিদেশি শোষণমুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ এবং সমমর্যাদার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখা।
৮. সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলা।
উপরোক্ত প্রস্তাবনার আলোকে ২৯ নভেম্বর ২০২৫ জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। কনভেনশনে অংশগ্রহণকারী সকল দল, গণসংগঠন, শ্রেণিপেশারর সংগঠন, নারী, আদিবাসীসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার, বিভিন্ন শোষিত জনগণের মতামতের ভিত্তিতে জনগণের নিজস্ব দাবিনামা প্রস্তু করা হবে।