
এহসানুল হক মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৮২ সালে পাড়ি জমান আমেরিকায়। সেখানে প্রায় ১২ বছরের মতো বসবাস করে আমেরিকার নাগরিকত্বও পেয়ে যান।
১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে ফিরে আসেন। এখানে এসে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারই প্রার্থী হয়ে জাতীয়, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যান তিনি। কিন্তু সে সময় বিএনপি সরকার গঠন করতে পারেনি। তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
১৯৯৬ সালের সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা চিঠি দেওয়া হয় স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর কাছে। যেখানে উল্লেখ করা হয় বিএনপি থেকে নির্বাচিত জাতীয় সাংসদ সদস্য এহসানুল হক মিলনের আমেরিকার নাগরিকত্ব রয়েছে, তাই অবিলম্বে তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হোক।
এদিকে,১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের নব-নির্বাচিত স্পিকার ও সিলেট -১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতীয় সংসদে কোনো রকম আলাপ-আলোচনা ছাড়াই এই চিঠি ইস্যু করে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে দেন।
এহসানুল হক মিলন তখনই তাঁর সংসদ সদস্যের পদটি ফিরে পাওয়ার জন্য মাননীয় আদালতের দারস্থ হন। দীর্ঘ সময় ধরে এই মামলার শুনানী চলতে থাকে। চলমান সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে আরেক সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসে।
এর মধ্যে এহসানুল হক মিলন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র এক্সপোজ করে দেন জাতির সামনে। তিনি ঘেঁটেঘুটে বের করেন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীরও ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসানের ব্রিটিশ নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র আদালতে উপস্থাপন করেন।
এর মধ্যে ২০০১ সালে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলো। আদালত রায় দিলো নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে তাদেরকে বিদেশি নাগরিকত্ব স্যারেন্ডার করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সেই প্রতিমন্ত্রী ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু এহসানুল হক মিলন ঘোষণ দেন আমেরিকার নাগরিকত্ব ছাড়বার। তিনি ঢাকায় আমেরিকার অ্যাম্বেসিতে রীতিমতো বড় আয়োজন করে তার নাগরিকত্ব স্যারেন্ডার করেন।
মিলনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা তখন দেশে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। মিলনের এমন সাহসী সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।
২০০১ সালের সেই নির্বাচনে চাঁদপুর থেকে পুনরায় বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মিলন। বিএনপি চেয়ারপার্সন,প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার কাঁধে শিক্ষা-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব তুলে দেন।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হয়ে নিজের জাত চেনান মিলন! ২০০১থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছেন, তাদের কাছে শুনতে পারবেন মিলনের গল্প।
ওই সময়ে দেশের পাবলিক পরীক্ষার সিস্টেমে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন ।
প্রটোকল ছাড়াই একজন প্রতিমন্ত্রী হয়ে সরাসরি এই কেন্দ্র থেকে ওই কেন্দ্রে চুপিসারে চলে যেতেন এহসানুল হক মিলন। হেলিকপ্টারে করে একইদিনে একাধিক শিক্ষাবোর্ডের অসংখ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করতেন।
এখনকার সময় যা হয়, হলে পোলাপান দেখাদেখি করলে গার্ডে থাকা স্যার-ম্যাডামরা যখন খবর পান বোর্ডের কোন অফিসার আসতেছে সদলবলে, তখন পোলাপানকে সতর্ক করে দেয়।
সেই সময় মিলন কেন্দ্র পরিদর্শনে যেতেন চুপিসারে। এক বছরের মধ্যে পোলাপানের এরকম একটা মাইন্ডসেট হয়ে গিয়েছিল ‘পড়ালেখা করা ছাড়া পাশ করার কোনো উপায় নাই’।
মিলনের মোটিভ ছিল কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে চেনাতে হবে এবং এমনভাবে কাজ করতে হবে, যা দীর্ঘকাল মনে রাখবেন দেশের মানুষ।
দেশের সফল মন্ত্রীদের মধ্যে ডেফিনেটলি মিলন একজন। মানুষ তার সেই সময়কার ইতিবাচক কাজের গল্প এখনো করে। প্রত্যাশা করে এরকম মন্ত্রীর।
মিলন এবারও নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্য বিএনপি তার নমিনেশন কনফার্ম করেছে। তিনি সাংসদ হতে পারলে এবং বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে তারেক রহমান তার ওপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার আস্থা রাখেন কিনা, সেটা দেখার বিষয়।

(সংগৃহিত ছবি: সহ-ধর্মীনির সাথে মিলন)