
স্টাফ রিপোর্ট: দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। এই আসনের মনোনয়ন পেতে গণসংযোগেও মাঠে নেমেছিলেন।
সিলেট-১ আসন না পেলে পুণরায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন প্রাক্তন এই মেয়র।
কোন ভাবেই তিনি সিলেট নগর -সদর ছাড়তে চান না বলেও জানেয়েছিলেন । তবে নগর -সদর ছাড়তে ‘অনিচ্ছুক’ আরিফুল হককে সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী করছে বিএনপি।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি সারা দেশে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছে। ৬৩টি আসনে প্রার্থী ফাঁকা রাখে দলটি, যার মধ্যে সিলেট-৪ আসন ছিল। আর সিলেট-১ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাসায় তলব করে সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন বিএনপি নেতা ও প্রাক্তন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভার্চুয়ালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিতিতে আরিফুল হককে সিলেট-৪ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
এদিকে,বুধবার (৫ নভেম্বর) ১০টা পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবনে চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে চেয়ারপারসনের নির্দেশে তিনি ওই আসনে নির্বাচন করতে সম্মত হন।
এ প্রসঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দলের উচ্চপর্যায় থেকে তাঁকে সিলেট-১-এর পরিবর্তে বেশ কয়েকবার সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য বললেও তিনি রাজি হননি। গতকাল রাতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁকে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হতে নির্দেশনা দেন। এ নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ নেই।আরিফুল হক চৌধুরী জানান, দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশ আমি কখনোই অমান্য করিনি, করবো-ও না। তাই সিলেট-৪ আসনেই নির্বাচন করবো, সব আল্লাহর ইচ্ছা।
তিনি বলেন, চেয়ারপারসন আমাদের জাতীয় মুরুব্বী। অতীতেও দলের প্রয়োজনে আমি বারবার নির্দেশ পালন করে আসছি। সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার আদেশ মাথা পেতে মেনে নিয়েছি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) এর প্রাক্তন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে আরিফুল হক আশাহত হন। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দলের উচ্চপর্যায় থেকে তাঁকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে গতকাল রাত নয়টার দিকে তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দেখা করার ডাক পান।
চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও আরিফুল হকের মুঠোফোনে আলাপ হয়। এ সময় চেয়ারপারসন আরিফুলকে সিলেট-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দেন। বিষয়টি দ্রুত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দল জানাবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) কেন্দ্রের জরুরি তলবে ঢাকায় যান আরিফুল হক চৌধুরী । সেখানে তাকে নিয়ে একাধিক দফায় বৈঠক হয়। সর্বশেষ বুধবার রাত ৯টায় বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে ডেকে পাঠান এবং এ সিদ্ধান্ত দেন।
আরিফুল হক চৌধুরী বর্তমানে এখন পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সিলেট জেলা বিএনপির সদস্য। এর আগে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একসময়ের ছাত্রদলের প্রভাবশালী এই নেতা।
বিগত দিনে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের শাসন আমলে সাবেক সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের জুনে প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে পরাজিত করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তিনি ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন।
২০১৪ সালে তাকে শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং গ্রেফতার করা হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিভিন্ন আদেশের মাধ্যমে তিনি আবার দায়িত্বে ফিরে আসেন।
২০১৮ সালে আরিফুল হক চৌধুরী পুনর্নির্বাচনে জয়লাভ করেন, যেখানে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে ৬,১৯৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। তব দলীয় নির্দেশনা মেনে ২০২৩ সালে সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে অংশ নেননি।